নানা অনিয়ম ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে গতকাল পর্দা নেমেছে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের। বাংলাদেশ ও ভুটানের ম্যাচে দুই অর্ধ খেলা হয় দুটি ভিন্ন মাঠে—এই ব্যতিক্রমী ঘটনায় সৃষ্টি হয় বিরল নজির। টুর্নামেন্টের শেষ দিনেও থেকে যায় একাধিক প্রশ্ন।
সাধারণত যেকোনো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি হয় “টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়” পুরস্কার। এবারের সাফে সেই পুরস্কার ঘিরেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। বাংলাদেশের ফুটবলার সাগরিকা একটি ট্রফি পেয়েছেন, যেটিতে লেখা ছিল “মোস্ট ভেল্যুয়েবল প্লেয়ার”। সাফের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও তাকে এমন স্বীকৃতি দেওয়ার পোস্ট ছিল। তবে পুরস্কার প্রদান মঞ্চে উপস্থাপক তাকে শুধু “গতকালের ম্যাচ সেরা” হিসেবে পরিচয় দেন। বাফুফের ফেসবুক পেজে আবার বলা হয়, তিনি “মোস্ট ভেল্যুয়েবল প্লেয়ার (ফাইনাল)”। অথচ এই টুর্নামেন্টে কোনো ফাইনাল ম্যাচই ছিল না।
এই তিন ভিন্ন ভাষ্য—সাফের ফেসবুক পোস্ট, পুরস্কার মঞ্চের উপস্থাপনা ও বাফুফের প্রচার—তিন রকম চিত্রই তুলে ধরে সাগরিকার স্বীকৃতি নিয়ে। আজ যখন সাফের সাধারণ সম্পাদক পুরুষত্তোম ক্যাটেলের কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বলেন, “টুর্নামেন্ট সেরা নয়, গতকালের ম্যাচ সেরা হিসেবেই তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।”
ডাবল রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে হওয়া টুর্নামেন্টে কোনো নির্ধারিত ফাইনাল ছিল না। ১১টি ম্যাচে কোনো ম্যাচ সেরা ঘোষণা করা হয়নি, অথচ শুধুমাত্র বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচেই ম্যাচ সেরা বাছাই করা হয়—এ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
সাধারণত ম্যাচ সেরার জন্য ছোট একটি ক্রেস্ট দেওয়া হয়। কিন্তু সাগরিকাকে যে ট্রফি দেওয়া হয়েছে, তা দেখতে মূলত টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফির মতোই। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেরা খেলোয়াড়ের কোনো পুরস্কার না থাকলেও, সেরা গোলরক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের মিলি এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে পূর্ণিমা রায়কে ট্রফি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাফে প্রতিটি দল ছয়টি করে ম্যাচ খেলেছে। সাগরিকা দ্বিতীয় ম্যাচের মাঝপথে লাল কার্ড পেয়ে তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ ছিলেন। টুর্নামেন্টে তিনি অর্ধেকেরও কম সময় মাঠে ছিলেন। তাই তাকে টুর্নামেন্ট সেরা হিসেবে ঘোষণা করলে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক। সেকারণেই শেষ মুহূর্তে সাফ পক্ষ থেকে তার স্বীকৃতি শুধুমাত্র “ম্যাচ সেরা” হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং পরে ফেসবুক পোস্টও এডিট করা হয়।
এদিকে, সাফের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কাজী সালাউদ্দিন এবারের আসরে একদিনও মাঠে আসেননি। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। ভারতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক পুরুষ ও নারী বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেও তার উপস্থিতি ছিল না। এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক পুরুষত্তোম ক্যাটেল জানান, “সভাপতির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়।”
সবমিলিয়ে টুর্নামেন্ট শেষে সাগরিকার স্বীকৃতি ও আয়োজনের কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য আয়োজকদের জন্য শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।