তের ৩৭তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন শুভমান গিল। নেতৃত্বের শুরুতেই যেন পুরো ক্রিকেটবিশ্বকে নিজের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি। হেডিংলিতে প্রথম টেস্টে ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি গিল। কিন্তু সেই আক্ষেপকে শক্তিতে পরিণত করে এজবাস্টন টেস্টে ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়েছেন এই তরুণ নেতা।
দুই ইনিংস মিলিয়ে গিল করেছেন ৪৩০ রান—যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। এই কীর্তির আগে রয়েছে শুধু ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচের ৪৫৬ রানের ইনিংস (১৯৯০ সালে, ভারতের বিপক্ষে)। গিলকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি এমনকি ব্রায়ান লারা, কুমার সাঙ্গাকারা বা মার্ক টেলররাও।
এক নজরে গিল ও ভারতের ঐতিহাসিক কীর্তিগুলো:
🔥 এক টেস্টে ৪০০+ রান
গিলের ৪৩০ রানের কীর্তির ফলে তিনি বিশ্বের মাত্র পঞ্চম ব্যাটার যিনি এক টেস্টে ৪০০ বা তার বেশি রান করেছেন। তালিকায় তার ওপরে আছেন কেবল গ্রাহাম গুচ (৪৫৬)। তার নিচে রয়েছেন মার্ক টেলর (৪২৬), কুমার সাঙ্গাকারা (৪২৪) এবং ব্রায়ান লারা (৪০০*)।
💥 ১১টি ছক্কা
এই ইনিংসে ১১টি ছক্কা হাঁকিয়ে গিল উঠে এসেছেন ভারতীয়দের মধ্যে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানো ব্যাটারদের তালিকায় তিন নম্বরে। তার ওপরে আছেন রোহিত শর্মা (১৩টি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) ও যশস্বী জয়সওয়াল (১২টি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে)।
🏏 টানা দুই ইনিংসে ১৫০+
প্রথম ইনিংসে ২৬৯ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬১ রান করে গিল টানা দুই ইনিংসে ১৫০-এর বেশি রান করার কীর্তি গড়েছেন। এই তালিকায় তার আগে ছিলেন কেবল অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান বোর্ডার, যিনি ১৯৮০ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫০* ও ১৫৩ রান করেছিলেন।
📊 এক টেস্টে দলের ১০১৪ রান
ভারত প্রথমবারের মতো একটি টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে এক হাজারের বেশি (১০১৪) রান করেছে। এই অর্জন তাদের টেস্ট ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। এত রান আগেই কেবল পাঁচটি দেশ করতে পেরেছে: ইংল্যান্ড (১১২১), পাকিস্তান (১০৭৮), অস্ট্রেলিয়া (১০২৮ ও ১০১৩) ও দক্ষিণ আফ্রিকা (১০১১)। ভারতের আগের সর্বোচ্চ ছিল ৯১৬ রান (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২০০৪)।
🎯 প্রথম দুই টেস্টেই অধিনায়ক হিসেবে ৫৮৫ রান
গিল অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম দুই টেস্টে করেছেন ৫৮৫ রান, যা ইতিহাসে প্রথম। এত কম সময়েই এই পরিমাণ রান করার নজির নেই আর কোনো টেস্ট অধিনায়কের।
🏆 প্রথম দুই টেস্টেই তিনটি সেঞ্চুরি
বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম দুই টেস্টে তিনটি সেঞ্চুরি করলেন গিল। এই কীর্তি ছিল এর আগে কেবল বিরাট কোহলির দখলে। আরও সাতজন অধিনায়ক নিজেদের প্রথম দুই টেস্টে দুটি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন।
🇮🇳 দুই ইনিংসেই শতক – তৃতীয় ভারতীয় অধিনায়ক
এজবাস্টনে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে গিল যোগ দিলেন বিশেষ ক্লাবে। এর আগে ভারতের হয়ে এমন কীর্তি গড়েছিলেন কেবল সুনীল গাভাস্কার ও বিরাট কোহলি।
চতুর্থ দিনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের জয়ের সুবাস স্পষ্ট। প্রথম ইনিংসে ভারতের ৫৮৭ রানের জবাবে ইংল্যান্ড থেমেছিল ৪০৭ রানে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত তোলে ৬০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য, জবাবে ইংল্যান্ড চতুর্থ দিন শেষে সংগ্রহ করে ৩ উইকেটে ৭২।
এই ম্যাচ ও সিরিজের প্রতিটি দিন যেন শুভমান গিলের জন্য ইতিহাস লেখার মঞ্চ হয়ে উঠেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে, যার নায়ক এই তরুণ অধিনায়ক।