ক্রীড়াঙ্গনে রাজনৈতিক বার্তা প্রদর্শনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কঠোর বিধিনিষেধ। বিশেষ করে মাঠের ভেতরে বা খেলাধুলা চলাকালীন সময় কোনো রাজনৈতিক বার্তা বহন করা নিষিদ্ধ। এই নীতির বলি হয়েছেন অনেক ক্রীড়াবিদ, যার মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার উসমান খাজা। ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতীকী বার্তা দিতে গিয়ে আইসিসির ভর্ৎসনা ও শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। কিন্তু একই সময়ে আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার অভিযোগে পড়ে গেছেন বিতর্কে, যদিও সেটি মাঠের বাইরের ঘটনা।
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মিরে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ ভারতীয় নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, যা সামরিক সংঘাতে গড়ায়। এই ঘটনার পর ভারতের পক্ষে বার্তা দেন জয় শাহ, যিনি শুধু আইসিসির চেয়ারম্যানই নন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পুত্রও। তার এই অবস্থান নেওয়া নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।
অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড–এর ক্রীড়া সাংবাদিক ম্যালকম কন বিষয়টি নিয়ে সরব হন। তিনি ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’-তে জয় শাহ’র বার্তার খবর শেয়ার করে লেখেন, “উসমান খাজাকে শান্তির বার্তা দিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ প্রকাশ্যে যুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানাতে পারেন! এ কেমন দ্বিমুখিতা!”
এই বক্তব্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থার প্রধান হয়ে কীভাবে তিনি সরাসরি রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারেন? আবার ভারতের নেটিজেনদের একাংশের দাবি, জয় শাহ ব্যক্তিগতভাবে তার দেশের প্রতি সমর্থন জানাতে পারেন—আইসিসি চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবে।
অন্যদিকে, উসমান খাজার ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ মাঠের ভেতরে ঘটায় আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে খাজা তার জুতা ও ব্যাটে “স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার, প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান”– এমন বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইসিসি এতে আপত্তি জানায় এবং ম্যাচ চলাকালীন এমন বার্তা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে তিনি প্রস্তুতি পর্বে সেই জুতা পরেন এবং ম্যাচে বার্তা ঢেকে রাখলেও তাকে ডিমেরিট পয়েন্ট ও সতর্কতা দেওয়া হয়।
এমনকি খাজা বক্সিং ডে টেস্টে শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রা ও জলপাই ডালের ছবি দিতে চাইলেও সেটিও অনুমোদন পায়নি। শেষমেশ শাস্তি এড়াতে তিনি কেবল তার দুই মেয়ের নাম ‘আয়শা’ ও ‘আয়লা’ লিখে খেলেন।
এই ঘটনাগুলো ঘিরে নেট দুনিয়ায় উঠেছে প্রশ্ন—আইসিসি কি সবাইকে এক চোখে দেখে? নাকি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা মানদণ্ড প্রয়োগ করছে?
এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি আইসিসি।