ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অনুশীলনে ৩১ জন ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। সিনিয়র দলে থাকা ১২ জনের সঙ্গে এবার যোগ দিয়েছে আর্মি ও বিকেএসপির অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ের ফুটবলাররা। তবে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, সানজিদা আক্তারসহ ১৮ ফুটবলার এখনও বাটলারের অনুশীলন বয়কট করে চলেছেন।

নারী ফুটবলারদের এই বিদ্রোহের কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) একদিকে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চালাচ্ছে, অন্যদিকে বাটলারের অধীনে নতুন খেলোয়াড়দের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। যদিও ফেডারেশন বলছে, মে মাসে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ সামনে রেখে জুনিয়র দল তৈরি করা হচ্ছে, তবে যদি বিদ্রোহী খেলোয়াড়রা ফেরার সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই দলকেই আরব আমিরাতে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

কোচ বনাম খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্ব
সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া ২৩ সদস্যের স্কোয়াডের ১৬ জনই কোচ বাটলারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এই বিরোধ সম্পর্কে জানার পরও বাফুফে ১৫ জানুয়ারি ব্রিটিশ কোচের সঙ্গে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছে। অথচ যেসব ফুটবলার বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন, তাদের চুক্তির মেয়াদ গত অক্টোবরে শেষ হলেও এখনও তা নবায়ন করা হয়নি।

এছাড়া, দেড় কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত তা পরিশোধ করেনি ফেডারেশন। বরং ফুটবলারদের চেয়ে কোচের প্রাধান্য বেশি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সমালোচনা ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারী ফুটবলাররা
এই বিদ্রোহের ঘটনা এখন শুধু ক্রীড়াঙ্গনেই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোচ বাটলারকে নিয়ে ফুটবলারদের অবস্থানকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা ও ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন নারী খেলোয়াড়রা। অনেকেই বাজে মন্তব্য করছেন, যা অনেকাংশেই সাইবার বুলিংয়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু খেলোয়াড়ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। যদিও পরে তারা ‘এসব মন্তব্য পেজ বা অ্যাডমিনের ব্যক্তিগত মতামত ছিল’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

বাফুফে ভবনে থাকলেও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী ফুটবলারদের কোনো মানসিক সাপোর্ট বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এমনকি সামাজিক মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়েও ফেডারেশন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, যা নারী ফুটবল ভক্তদের আরও বিভ্রান্ত করছে।

তদন্ত কমিটির অগ্রগতি
গত বৃহস্পতিবার রাতে গঠিত বিশেষ কমিটি ইতোমধ্যে বিদ্রোহী ১৮ নারী ফুটবলারের বক্তব্য শুনেছে। সবাই বাটলারের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।

আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় কমিটি আবার বসবে এবং কোচিং স্টাফদের বক্তব্য শোনার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফেডারেশনে আসবেন, এবং বৃহস্পতিবার বিশেষ কমিটির সভাপতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।

এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts