লর্ডস টেস্ট দিয়ে চার বছর পর সাদা পোশাকে ফিরেছেন ইংল্যান্ডের গতির রাজা জোফরা আর্চার। আর প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই নিজের আগুনঝরা স্পেলে মনে করিয়ে দিয়েছেন পুরোনো দিনের ভয়ঙ্কর রূপ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের ৭৩তম ওভারটি এখন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দ্রুতগতির ওভার হিসেবে পরিচিত। ওভারটির ছয়টি বলের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার, যেখানে প্রতিটি ডেলিভারির গতি ছিল যথাক্রমে—১৫০, ১৫০, ১৪৯, ১৪৬, ১৪৮ ও ১৪৮ কিলোমিটার।
এই ওভার শেষ হতেই গর্জে উঠেছিল লর্ডসের গ্যালারি। আর্চারের সেই ওভারের ভিডিও এবং গতি পরিসংখ্যান নিজেদের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড।
এর আগেও ৭১তম ওভারে এমনই গতির তাণ্ডব চালিয়েছিলেন আর্চার—ওই ওভারে তার বলগুলোর গতি ছিল ১৫০, ১৪৭, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯ ও ১৫০ কিলোমিটার। মধ্যাহ্ন বিরতির পর টানা চার ওভারে ভারতীয় ব্যাটারদের ওপর চাপ তৈরি করেছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে আর্চার ২৩.২ ওভার বল করে ৫২ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন।
রেকর্ড বইয়ে নাম তুললেন রাহুল ও পান্ত
ভারত-ইংল্যান্ডের লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংস ইতোমধ্যেই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। দুই দলই প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ রান করেছে—যা টেস্ট ইতিহাসে নবমবারের মতো এবং ২০১৫ সালের পর প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটল।
লোকেশ রাহুল এই ইনিংসে ১০০ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন ১৭৭ বলে। এটি তার ১০তম টেস্ট শতক, যার মধ্যে ৯টিই বিদেশের মাটিতে। প্রথম ১০ সেঞ্চুরির মধ্যে ৯টি বিদেশে করার কীর্তি রাহুলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন কেবল কেন বেরিংটন ও মহিন্দর অমরনাথ।
রাহুল ইংল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ৪টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন, যা সফরকারী ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার ওপরে আছেন কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (৫ সেঞ্চুরি)। লর্ডসে একাধিক সেঞ্চুরি করা ব্যাটারদের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছেন তিনি, যেখানে আগে ছিলেন বিল ব্রাউন, গর্ডন গ্রিনিজ এবং গ্রায়েম স্মিথ।
২০১৮ সাল থেকে ইংল্যান্ডে খেলা ওপেনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪টি সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন রাহুলের। এই সময়ে ইংলিশ ওপেনার বেন ডাকেট ৩, ররি বার্নস ও জ্যাক ক্রাউলি করেছেন ২টি করে সেঞ্চুরি। অথচ রাহুল খেলেছেন মাত্র ২১ ইনিংস, বাকিরা ২৮ বা তারও বেশি ইনিংস।
পান্তের দুর্দান্ত ফর্ম
লর্ডস টেস্টে রাহুলের সঙ্গে ১১৫ রানের মূল্যবান জুটি গড়েছেন ঋষভ পান্ত। ইংল্যান্ডে এটাই তাদের তৃতীয় ১০০+ রানের জুটি, যা ভারতের হয়ে ওপেনিং জুটির বাইরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৮ সালে ওভালে তারা গড়েছিলেন ২০৪ রানের জুটি এবং চলতি সিরিজেই লিডসে করেন ১৯৫ রানের পার্টনারশিপ।
ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বোচ্চ ৮টি টেস্টে হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড এখন পান্তের। উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে ঘরের বাইরে নির্দিষ্ট কোনো দেশে এটি সর্বোচ্চ। তার আগে এই কীর্তি ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনি (৮) এবং জন ওয়েটের (৭)।
এছাড়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডটিও এখন পান্তের দখলে—৩৫টি ছয়। আগের রেকর্ডটি ছিল ভিভ রিচার্ডসের (৩৪)।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ৮৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন পান্ত, যা ভারতের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সমান ছয় রয়েছে রোহিত শর্মারও, তবে তিনি খেলেছেন ১১৬ ইনিংস, যেখানে পান্ত খেলেছেন মাত্র ৮০ ইনিংস। এই তালিকায় শীর্ষে আছেন বীরেন্দর শেবাগ (৯০ ছক্কা, ১৭৮ ইনিংস)।
ভারতীয় ব্যাটারদের ছয়ের রেকর্ড
চলমান সিরিজে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটাররা মেরেছেন ৩৪টি ছয়—যা বিদেশের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজে কোনো দলের সর্বোচ্চ। এখনও সিরিজে দুটি টেস্ট এবং একটি ইনিংস বাকি রয়েছে। এর আগে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২ এবং পাকিস্তানে নিউজিল্যান্ড ৩২টি ছক্কা মেরেছিল।
সব মিলিয়ে লর্ডস টেস্ট জমে উঠেছে রেকর্ড, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর উত্তেজনায়। সিরিজের বাকি অংশেও এমনই পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।