নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক মেজাজে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। গ্যালারির প্রায় ৯৫ শতাংশই ভরা ছিল লস ব্লাঙ্কোস সমর্থকে। তবে মাঠে একতরফা আধিপত্য দেখাল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নদের মাত্র ৯ মিনিটেই জোড়া গোল হজম করিয়ে ছন্দপতন ঘটায় জাবি আলোনসোর শিষ্যদের। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি রিয়াল। শেষ পর্যন্ত ৪-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয় নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লুইস এনরিকের দল।

এই ম্যাচ দিয়েই রিয়ালের ডাগআউটে অভিষেক হলো কোচ জাবি আলোনসোর। ঘরোয়া ও ইউরোপীয় মৌসুমে ব্যর্থতা সঙ্গী হওয়া রিয়াল দলে ছিল অগোছালো ভাব, তার ওপর নতুন ফরমেশনে মানিয়ে নিতে পারেনি দলটি। তবে এমনভাবে একপেশে হারে ক্লাব বিশ্বকাপের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা ধরাশায়ী হবে, তা হয়তো কেউ ভাবেননি। পিএসজি যেন তাদের বাস্তবতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

গোলের উৎসব: রুইজের জোড়া, দেম্বেলে-রামোসের একটি করে

ম্যাচের ৬ মিনিটেই পিএসজিকে এগিয়ে দেন ফ্যাবিয়ান রুইজ। রিয়ালের সেন্টারব্যাক রাউল অ্যাসেনসিওর ভুলে বল পেয়ে যান উসমান দেম্বেলে, তার পাস থেকে রুইজ লক্ষ্যভেদে ভুল করেননি। তিন মিনিট পরেই আবার রিয়াল রক্ষণে গড়বড় করেন অ্যান্টনিও রুডিগার। দেম্বেলে বল কেড়ে নিয়ে শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।

২৪তম মিনিটে আশরাফ হাকিমির দুর্দান্ত পাসে আবারও স্কোরশিটে নাম লেখান রুইজ। বিরতির আগেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। প্রথমার্ধে বলের দখল, গতি আর পাসিংয়ে রিয়ালকে পেছনে ফেলে দেয় ফরাসি ক্লাবটি। রিয়ালের পজেশন ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।

দুর্বল রক্ষণ, ইনজুরি ও নিষেধাজ্ঞায় ভুগল রিয়াল

সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ নামতে হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ দুই ডিফেন্ডার ছাড়া। কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞায় ছিটকে যান ডিন হুইজসেন, আর ইনজুরিতে পড়েন ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আরনল্ড। প্রথমার্ধে থিবো কোর্তোয়া দুটি ভালো সেভ করলেও রক্ষণের ভুলে বারবার ভুগেছে রিয়াল। পুরো ম্যাচে পিএসজির ছিল ৬৯ শতাংশ পজেশন, ১৭টি শটের মধ্যে ৭টি লক্ষ্যে। রিয়াল ১১টি শট নিয়েও কেবল ২টি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে।

শেষ পেরেক ঠুকলেন রামোস

দ্বিতীয়ার্ধে পিএসজি কয়েকটি পরিবর্তন এনেও আক্রমণের ধার হারায়নি। যদিও একবার অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়। শেষ দিকে, ৮৮তম মিনিটে গঞ্জালো রামোস ডি-বক্সে প্রবেশ করে জোরালো শটে চতুর্থ গোলটি করেন। গোলের পর উদযাপনে স্মরণ করেন তার স্বদেশি দিয়েগো জোতাকে।

ইতিহাস গড়ার পথে এনরিকের পিএসজি

এই জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল পিএসজি। মাসখানেক আগে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা লুইস এনরিকের সামনে এবার আরও একটি বড় শিরোপা জয়ের সুযোগ। এর আগে তিনি ২০১৬ সালে বার্সেলোনাকে নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছিলেন।

ফাইনালে পিএসজির প্রতিপক্ষ হবে একবারের ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ী ইংলিশ ক্লাব চেলসি। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী রোববার। এখন দেখার বিষয়, এনরিকের পিএসজি ইতিহাস গড়তে পারে কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts